হবিগঞ্জ-২ আসন আ.লীগের হাফডজন প্রার্থী মাঠে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের জালালি কইতর সুনামগঞ্জের কুড়া/সুরমা নদীর গাংচিল আমি শূন্যে দিলাম উড়া/শূন্যে দিলাম উড়া রে ভাই যাইতে চান্দের চর/ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কইলকাত্তার উপর…’ প্রখ্যাত গণসংহীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের এই লোকগানে উঠে আসা হবিগঞ্জ কৃষি, মৎস্যসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-২ আসনটি। এ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। উপনির্বাচনসহ এ পর্যন্ত ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ৮টি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।

বর্তমানে এ আসনের এমপি হচ্ছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান। আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হতে কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া ওই দল থেকে আরো বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেন্দ্রে জোর লবিং ও তৃণমূলে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য চৌধুরী আবু বকর ছিদ্দিকী। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার, সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. ইকবাল খান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, বানিয়াচং উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির শিশু ও পরিবারকল্যাণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজা বেগম সাঈদা, হবিগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রেজাও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত আহমেদ আলী মুকিব আবদুল্লাহর নামও শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে এককভাবে আসনটিতে কাজ করে যাচ্ছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল। দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এ ব্যাপারে বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ খানের দাবি, বর্তমান সরকারের আমলে বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। ‘আগামীতেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এ আসনটিতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে।’ মনোনয়নের বিষয়ে তিনি জানান, ‘মনোনয়ন দেবে দলের হাইকমান্ড। আমার দলের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।’

চৌধুরী আবু বকর ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। পরে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। বর্তমানেও আমি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকি। ১৯৮৭ সালে সাড়ে চার মাস ডিটেনশনসহ পুলিশি নির্যাতনে শিকার হই। পরে বিএনপি সরকারের আমলেও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। বিগত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হলেও জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই নৌকার বিজয়ের জন্য সাধ্যমতো কাজ করেছি। আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।’

ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ জানান, ‘সমৃদ্ধ বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ গড়তে চাই। যে ফর্মেই হোক এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যেতে আমি বদ্ধপরিকর।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন জানান, ‘আমরা আশা করি আগামী ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের জয় হবেই। তবে দল কাকে মনোনয়ন দেবে সেটা দলের হাইকমান্ড জানেন। আবারও বলতে পারি নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থী অবশ্যই জয়ী হবে। এ আসনে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব শংকর পাল। সাধারণ জনগণের কাছে তিনিও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন ব্যাপক।’

সব দলের অংশগ্রহণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এক লাখ ২২ হাজার ২৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ৬৯ ভোট। ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আবদুল মজিদ খান। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৩৬২। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৫৫৯ ভোট।

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন এমপি হন। এরপর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল এম এ রব, ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাডভোকেট আলী, ১৯৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সিরাজুল হোসেন খান নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ৯৬-এর নির্বাচনে টানা দুবার এমপি হন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ তৎকালীন সভাপতি মরহুম অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তার মৃত্যুর পর ১৯৯৭ সালের উপনির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি নাজমুল হাসান জাহেদ। সর্বশেষ ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান নির্বাচিত হন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর